Durga Puja date

দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হয় মাতা দুর্গার আগমনের মাধ্যমে। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই এই উৎসবটি নির্দিষ্ট সময়ে পালিত হয়, যা মূলত চাঁদের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এই সময়টাতে পরিবারের সকল সদস্য একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন।

এই নিবন্ধে আমরা ২০২৪ সাল থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত দুর্গাপূজার তারিখের তালিকা, দিন এবং কত দিন বাকি আছে তা নিয়ে উল্লেখ করেছি। আপনাদের সুবিধার্থে, আমাদের তৈরি করা টেবিলটি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যাতে আপনি সহজেই আপনার পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন এবং দুর্গোৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

দুর্গাপূজার তারিখ ও দিন

নিচে দেওয়া টেবিলটি ২০২৪ সাল থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত দুর্গাপূজার তারিখগুলির তালিকা প্রদান করছে, যাতে আপনারা পূজার পরিকল্পনা সহজে করতে পারেন:

বছর তারিখ দিন বাকি দিন

দুর্গাপূজা: একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব

দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা এবং আসামের মতো রাজ্যগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়। তবে কেবল এই রাজ্যগুলিতেই নয়, ভারতের অন্যান্য অঞ্চল এবং বাংলাদেশের মানুষও এই পূজা পালনে অংশ নেয়। মায়ের আরাধনা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং বিশেষ পুজোর ভোগ সবমিলিয়ে দুর্গাপূজার দিনগুলি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে ওঠে।

দুর্গাপূজার সময় নির্ধারণ

দুর্গাপূজার সময় সাধারণত মহালয়া থেকে শুরু হয়, যেদিন মায়ের আগমনের বার্তা দেওয়া হয়। এরপর ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীতে এই পূজা পালিত হয়। দশমী দিনটি বিজয়া দশমী নামে পরিচিত, যেদিন মা দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে কৈলাশে ফিরে যান। দুর্গাপূজার দিন নির্ধারণ হয় পঞ্জিকা অনুযায়ী এবং এই দিনগুলি চান্দ্র তিথির উপর নির্ভরশীল।

দুর্গাপূজার উৎসব এবং তার প্রভাব

দুর্গাপূজার সময় সাধারণত স্কুল, কলেজ এবং অফিসগুলিতে ছুটি থাকে, যা মানুষকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়। এসময় বিভিন্ন স্থানীয় মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং প্রতিমা দর্শনের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ একত্রিত হয়। এর পাশাপাশি, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও উৎসবকালীন বিক্রি বেড়ে যায়। দুর্গাপূজার বাজারে বিশেষ ছাড় এবং নতুন পণ্যের প্রচার এসময় ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়াও, দুর্গাপূজার সময় নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডও সংঘটিত হয়। পুজো প্যান্ডেলগুলি সাধারণত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রতিমা তৈরি এবং পূজার আয়োজনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা দুর্গাপূজার মান বজায় রেখে পরিবেশেরও যত্ন নিচ্ছে।

দুর্গাপূজার মিথ এবং প্রতিমা নির্মাণ

দুর্গাপূজার পেছনে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনির মিশ্রণ। মূলত, মহিষাসুর নামে এক অসুর রাক্ষসের অত্যাচারে স্বর্গ এবং পৃথিবীর মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তখন দেবতারা একত্রিত হয়ে মহামায়া দুর্গার সৃষ্টি করেন এবং তার হাতে সকল দেবতা তাদের অস্ত্র অর্পণ করেন। মা দুর্গা দশ হাতে দশটি অস্ত্র ধারণ করে মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং অবশেষে তাকে বধ করে পৃথিবীকে শান্তি প্রদান করেন। এই কাহিনিই প্রতিফলিত হয় দুর্গাপূজার প্রতিমাগুলিতে।

দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয় কাদা এবং খড় দিয়ে। মূর্তির মুখ গঠন, সাজসজ্জা, এবং রঙের ব্যবহার অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে করা হয়। প্রতিমার পেছনের কাহিনি এবং প্রতিটি মূর্তির পৃথক প্রতীকী অর্থ রয়েছে। যেমন, দুর্গার দশ হাত শক্তি এবং সাহসের প্রতীক, এবং তার সিংহ বাহন ধৈর্য এবং নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।

ঢাক, ধুনুচি নাচ এবং আলোকসজ্জা

দুর্গাপূজার আরও একটি অন্যতম আকর্ষণ হল ঢাকের বাজনা এবং ধুনুচি নাচ। ঢাকের তালে তালে পূজার আঙ্গিনায় ধুনুচি হাতে নাচের মাধ্যমে ভক্তরা মায়ের প্রতি তাঁদের ভক্তি প্রদর্শন করেন। বিশেষত অষ্টমী এবং নবমীর দিন এই নাচ এবং সঙ্গীত আয়োজন করা হয়, যা পূজার আচার অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

দুর্গাপূজার সময় আলোকসজ্জা এবং প্যান্ডেল সাজানোর প্রতিযোগিতা বড় আকার ধারণ করে। প্রতিটি প্যান্ডেল ভিন্ন ভিন্ন থিম নিয়ে সাজানো হয় এবং এই থিমগুলির মাধ্যমে প্রায়শই সমসাময়িক সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বার্তা দেওয়া হয়। কৃত্রিম আলো, বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন এবং শৈল্পিক প্রতিভা দিয়ে প্যান্ডেলগুলি তৈরি হয় যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

কুমারী পূজা

কুমারী পূজা দুর্গাপূজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আচার, বিশেষ করে নবমী তিথিতে। এই আচার অনুসারে, মায়ের প্রতীক হিসেবে একটি কুমারী মেয়েকে পূজা করা হয়। এটি মেয়েদের শক্তি এবং শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়, যা আমাদের সমাজে নারীর মর্যাদা ও শক্তির গুরুত্বকে তুলে ধরে।

সিঁদুর খেলা

বিজয়া দশমীর দিন আরেকটি বিশেষ আচার হল সিঁদুর খেলা। এই দিনে বিবাহিত মহিলারা মা দুর্গার মূর্তির কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন এবং এরপর নিজেদের মধ্যে সিঁদুর ছিটিয়ে খেলা করেন। এটি শুভ বিবাহিত জীবনের প্রতীক এবং সংসারের মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।

পরিবেশ বান্ধব দুর্গাপূজা

বর্তমান যুগে দুর্গাপূজার সময় পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস, পরিবেশবান্ধব প্রতিমা নির্মাণ, এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার এখন পূজা আয়োজকদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। নদী এবং জলাশয়গুলিতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, যা একটি সচেতন সমাজের চিত্র তুলে ধরছে।

সমাপ্তি

দুর্গাপূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সার্বজনীন উৎসব যা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে একত্রিত করে। ধর্মীয় আচার, সংস্কৃতি, সামাজিক বন্ধন এবং পরিবেশগত দায়িত্ববোধের মিশ্রণে এই উৎসবটি আমাদের জীবনে বিশেষ স্থান অধিকার করে। দুর্গাপূজার প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দ, একতা এবং সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।

এবারের দুর্গাপূজা আসুক নতুন আনন্দ এবং মঙ্গলবার্তা নিয়ে, আর আমরা সবাই এই উৎসবের মাধুর্য উপভোগ করে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে বিশেষ করে তুলতে পারি।